আজ যারা মাধ্যমিকে ব্যর্থ হলে, তাদের আর অভিভাবকদের জন্য দুটো কথা

Updated By: May 10, 2016, 05:27 PM IST
আজ যারা মাধ্যমিকে ব্যর্থ হলে, তাদের আর অভিভাবকদের জন্য দুটো কথা

স্বরূপ দত্ত

 

আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হল। মাধ্যমিক। সেই অর্থে আমাদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উতরানোর পরই নদী থেকে বইতে বইতে জীবনের সাগরে পড়ে ছাত্রজীবন। প্রায় ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে আজ বেশিরভাগই পাশ করবে। কেরিয়ারের শুভ সূচনা করবে। তাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন তাদের অভিভাবকরা। আর সেই স্বপ্ন সত্যি করতে উদ্যোগী হয়ে ফের নতুন উদ্যমে জীবন যুদ্ধে ঝাঁপাবে ছাত্র-ছাত্রী। না, গল্পটা এত সহজ-সরল নয়। কারণ, আজ সবাই পাশ করবে না। হ্যাঁ, সত্যি এটাই। এই ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে একটা বড় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আজ জীবনের প্রথম পরীক্ষায় সফল হবে না। এই লেখাটা তাদের জন্যই। কারণ, সফলদের পাশে তো সবাই আলো করে থাকবে। ব্যর্থদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়াও ঠিক হবে না। তাই কয়েকটা কথা।

১) যারা এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারোনি, মানে তোমার আশানুরূপ ফল হয়নি, তারা হাল ছেড়ো না। হীনমন্যতায় ভূগো না। ভেবো না, সব শেষ হয়ে গেল। আজ যদি তোমার রেজাল্ট খারাপ হয়ে থাকে, সেটা একদিনে হয়নি। গত একটা বছরের ফাঁকির ফল পেলে হয়ত আজ। তাই আজ মন খারাপ করে থেকে হাল ছেড়ে দিও না। অবসাদে ভূগো না। বরং, আজ অনুভব করো যে, আর পরীক্ষাটা ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু পরের বার থেকে আর এই মন খারাপের দিন যাতে না আসে, সেই চেষ্টা শুরু করে দাও আজ থেকেই। মনে রেখো, মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করলে যেমন জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি, তেমন যারা খারাপ ফল করল, তারা জীবন থেকে হারিয়ে গেল এতটাও ঠিক নয়। আমাদের এই সমাজে এমন অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ রয়েছেন, যাঁদের জীবনের এই প্রথম পরীক্ষাটা ভালো হয়নি। তারপরেও তাঁরা মোটেও হাল ছেড়ে দেননি। তোমরাও দিও না। একটা পরীক্ষা খারাপ হয়েছে শুধু। পরেরটায় ভালো ফল করাটা স্রেফ তোমার ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।

২) এবার যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারল না, তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলছি। ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ ফল করলে বাবা-মা হিসেবে তাদের উপর রাগ করাই স্বাভাবিক। অথবা হতাশা আশাই স্বাভাবিক। আপনারা হয়তো অনেক পরিশ্রম করে ছেলে-মেয়ের ভালো ভবিষ্যতের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর সেই ছেলে-মেয়েই যখন নিজেরা বুঝছে না, তাহলে হতাশা তো আসবেই। আর আপনার ছেলে-মেয়ের পরীক্ষার ফল কেমন হল, এ উত্তর তো সবাইকেই দিতে হবে। হয়তো আপনি লজ্জিত হবেন। বলতে কুন্ঠা বোধ করবেন। এইসব সাত পাঁচ ভেবে আজ ছেলে-মেয়ের উপর রাগটা গিয়ে পড়াই স্বাভাবিক। ঠিক। তবু, আপনাদের উদ্দেশ্যে বিনীত অনুরোধ। আজ বকলেও, মারলেও, ছেলে-মেয়ের পরীক্ষার ফল বদলে গিয়ে ভালো হয়ে যাবে না। ফল খারাপের দুঃখ ওরাও পায়। ওরা ছোট, তাই ওদের অনুশোচনা হয়তো আমরা অতটা বুঝতে পারি না। ওদের অনুতাপের উপর আজ আর নিজেদের রাগের জ্বালা মেটাতে যাবেন না। আজ নিজেরা হতাশ হলেও ওদের পাশে দাঁড়ান।একটু বেশি করেই। বোঝান যে আপনারা ওদের ভরসা। ওরা যেন অবসাদে ভূগে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে না নেয়। সেটা কিন্তু পরীক্ষার খারাপ ফলের থেকে আরও মারাত্মক হবে।

(আর সবশেষে যেটা অবশ্যই বলে রাখা।এই কথাগুলো ফাঁকিবাজিকে প্রশ্রয় দিতে নয়। শুধু এটা বলতে যে, আজ ফল বেরোনোর দিনে মন খারাপ কোরো না। বরং, সামনের দিনের সাফল্যের জন্য এখন থেকেই এই কষ্টটাকে বারুদে রূপান্তরিত করো। দেখো, ঠিক ফল পাবে।)

.